Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
গাইনী ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞস্বাস্থ্য তথ্য

গর্ভাবস্থার যত্নঃ গর্ভবতী নারীর যত্নের সম্পূর্ণ গাইড লাইন

গর্ভধারণ

গর্ভকালীন বা মাতৃত্বকালীন সময় তা একজন নারীর জীবনে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দ দায়ক সময়। এই সময় একজন হবু মায়ের অনেক বিষয়ের উপর ধারনা থাকা জরুরি।যেমন  কি খেতে হবে, কোন খাবার খেলে বাআচার ভালো হবে, কোন খাবার খাওয়া ঠিক হবে না ইত্যাদেই। একজন অনাগত শিশুর সুস্থ্যতা, শারীরিক উন্নতি ও মানসিক বৃদ্ধি মায়ের শারিরিক ও মানসিক সুস্থ্যতার উপর নির্ভর করে। তাই একজন হবু মায়ের সব ধরণের যত্নের জন্য পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের সহযোগীতা একান্ত প্রয়োজন। 

গর্ভাবস্থার যত্ন

একজন নারীর গড়ে ২৮ দিন পর পর ঋতুস্রাব বা মাসিক হয়ে থাকে। একে রজঃচক্র বা ঋতুচক্র বলে। হঠা করে এই ঋতুস্রাব বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া ই গর্ভধারণের প্রথম এবং সাধারন লক্ষণ। তাছাড়া খাওয়ার অরুচি, বমি, মাথা ঘোরা ইত্যাদি লক্ষণ গুলো দেখা যায়। হরমোনের পরিবর্তন একেক জন নারীর ক্ষেত্রে একেক রকম হয় বা পরিবেশের ভিন্নতার কারণে এই লক্ষণ গুলো সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে দেখা যায় না। 

একজন নারীর গর্ভধারণের পর থেকে  বাচ্চা জন্মদান পর্যন্ত একটি দীর্ঘ এবং জটিল সময়। নারীদের ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর থেকে ৯ মাস ৭ দিন পর্যন্ত গর্ভবতী মা ও তার গর্ভের বাচ্চার সুস্থ্যতার উদ্দেশ্যে বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন যাকে বলা হয়  Antenatal Care বা গর্ভকালীন যত্ন। গর্ভবতী নারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থ্যতা এবং একজন সুস্থ্য সবল নবজাতকের জন্য গর্ভকালীন যত্ন খুব বেশি গুরুত্ব পূর্ণ। গর্ভকালীন যত্নের প্রধান উদ্দেশ্য গর্ভকালীন জটিলতা এড়ানো, মায়ের সুস্থ্যতা, সুস্থ্য ও স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসব, মা যেন ঠিক মত দুধ পান করাতে পারেন। একজন গর্ভবতী নারীর গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ প্রসব এবং প্রসব পরবর্তী যত্ন স্বামীসহ পরিবারের প্রতিটি সদস্যের দায়িত্ব ও কর্তব্য। গর্ভাবস্থার এই দীর্ঘ সময় কে ৩টি ট্রাইমেস্টারে ভাগ করা হয়ে থাকে। আজ আমরা এই নিবন্ধে ট্রাইমেস্টার অনুযায়ী গর্ভাবস্থায় নারীর খাবার তালিকা, সতর্কতা ও জরুরি সেবা নিয়ে আলোচনা করবো। তবে মনে রাখবেন খাবারের তালিকা মায়ের অভ্যাস, ওজন ও আরো অনেক কিছুর উপর নির্ভরশীল। 

গর্ভবতী মায়ের খাবার 

একজন সুস্থ্য  সবল ও স্বাভাবিক বাচ্চা জন্মদানের প্রধান শর্ত হচ্ছে মায়ের শরীরের সঠিক যত্ন ও  প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ। ঠিক মতো সুষম খাবার গ্রহণ না করলে গর্ভকালীন অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। মায়ের ওজন কমে যাওয়া, রক্ত শূন্যতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে গর্ভের বাচ্চা ও অপুষ্টির শিকার হবে। মায়ের শরীর ও ভ্রুণের সঠিক বিকাশের জন্য স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত খাবারের দরকার হয়। শিশুর সব ধরণের পুষ্টির চাহিদা তার মায়ের মাধ্যমেই পূরণ হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় একজন নারীকে অবশ্যই শরীরে যত্ন নিতে হবে, পুষ্টির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, কি খাওয়া উচিত কি খাওয়া উচিত না সেগুলো মেনে চলতে হবে। গর্ভবতী নারী ও তার শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুষ্টি সমৃদ্ধ ও সুষম খাবার নিশ্চিত করতে হবে।  

গর্ভাবস্থায় মায়েদের প্রধান ৩ টি পুষ্টি সেবা ও যত্ন

  1. দিনে ৩ বার মূল খাবার ও ২ বার নাস্তায় স্বাভাবিকের অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে। 
  2. রাতে ৬-৮ ঘন্টা ঘুম এবং দিনের ২ ঘন্টা বিশ্রাম নিতে হবে। ভারী কাজ থেকে বিরর থাকতে হবে।
  3. প্রতি রাতে একটি আয়রণ ট্যাবলেট খেতে হবে। 

গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকের যত্ন(০-৩মাস) 

গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসকে ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার বলা হয়। এই ট্রাইমেস্টারে তেমন বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। তবে প্রয়োজনীয় খাবার না খেলে মায়ের ওজন কমে যাওয়া, রক্ত শূণ্যতা সহ আরো নানা বিধ জটিলতা দেখা দেয়। 

খাদ্য ও পুষ্টি

গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন নামক হরমোন প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলে তৈরি হয়। এটা অন্তঃস্বত্তা হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোন মিলে শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসে। তাই প্রথম ৩ মাস গর্ভবতী নারী কিছু খেতে পারেন না এবং খেলেও বমি করে ফেলেন। গাইনী ডাক্তার গণ তাই এই সময়ে জোর করে খাওয়ার জন্য মানা করেন। এই সময় মায়েদের অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পর পর খাওয়া উচিত।  এই সময় মায়ের খাদ্য তালিকায় ফলিক এসিড, আয়রণ, ক্যালসিয়াম, জিংক ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার থাকবে। শাক সবজি, ফল, ডিম, দুধ ইত্যাদি থাকবে। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠ কাঠিন্য একটি সাধারণ খাবার। এর জন্য মায়ের আঁশ যুক্ত খাবার যেমন বাদামি ভাত, ওটস, ছোলা, মুগ, সবুজ মটর, ভুট্টা, ব্রকলি, শাক-সবজি ইত্যাদি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করতে হবে। দৈনিক ১০-১২ গ্লাস পানি পান করা উচিত। 

আসুন এক নজরে গর্ভবতী নারীর প্রথম ০৩ মাসের খাবার সম্পর্কে জেনে নেই 

দৈনিকঃ ১৬০০ ক্যালরি

সকালের নাস্তা ( সকাল ৭টা -৮টা)

  • ডিম-১টা বা ডাল -১০ গ্রাম
  • রুটি/পাউরুটি- ৬০ গ্রাম (২পিস)
  • সবজি- ইচ্ছেমতো

সকাল ১০-১১ টা

  • মুড়ি/বিস্কুট/কেক ইত্যাদি ৬০ গ্রাম
  • ফলমূল

দুপুরের খাবার 

  • ভাত- ২কাপ ( ২৪০ গ্রাম)
  • মাছ/মাংস- ৬০ গ্রাম
  • ঘন ডাল- আধা কাপ
  • সবজি ইচ্ছেমতো

বিকালের নাশতাঃ নুডলস/সেমাই/ ছোলা মুড়ি- ৩০ গ্রাম 

রাতের খাবার 

  • ভাত- ২কাপ ( ২৪০ গ্রাম)
  • মাছ/মাংস- ৬০ গ্রাম
  • ঘন ডাল- আধা কাপ
  • সবজি ইচ্ছেমতো

শোয়ার আগেঃ এক দুধ-১ কাপ 

প্রথম ৩ মাসে সাধারণ সমস্যা ও তার প্রতিকার

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে হরমানের পরিবর্তনের কারণে পুরো শরীর প্রভাবিত হয়। ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এই পরিবর্তন গুলো সব মায়েদের ক্ষেত্রে সমান হয় না। গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস নিম্নোক্ত সমস্যা গুলো দেখা যায়-

  • হালকা পেট ব্যথা
  • বমি ভাব
  •  ক্লান্তি
  • বুক জ্বালা পোড়া
  • প্রস্রাবের চাপ বেশি
  • সাদা স্রাব
  • অনেক সময় হালকা রক্ত মিশ্রিত 
  • শরীরে পানি আসা

সমস্যা সমাধানে করণীয়

  • প্রথমেই একজন ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত। ওজন, রক্তচাপ ও অন্যান্য বিষয় গুলো পরীক্ষা করা থাকলে মায়ের শরীরের জটিলতা অনেকাংশে কমানো যায়। 
  • বমির সমস্যা হলে খালি পেটে ব্রাশ না করা ই ভালো। রাতের খাবারের পর ব্রাশ করুন। সকালে তরল খাবারের চেয়ে শুকনো খাবার খান। অল্প অল্প করে বার বার খান।  
  • ঘুমের সমস্যা হলে ঘুমাবার আগে এক গ্লাস গরম দুধ খেতে পারেন। সন্ধায়র পর পানি খাওয়া কমিয়ে দিতে পারেন। যেন প্রস্রাবের চাপ ঘুমের সমস্যা না করতে পারেন। মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন এবং ইতিবাচক চিন্তা করুন। বই পড়তে পারেন। আর ঘুমানোর আগে শাওয়ার নিতে পারেন। তাতে ঘুম গভীর হবে। 
  • কোষ্ঠ কাঠিন্য রোধে প্রচুর পানি ও আঁশ যুক্ত খাবার খান। সপ্তাহে ৩ দিন ২০-৩০ মিনিট হাটুন এবং হালকা ব্যায়াম করুন।
  • শরীরে পানি আসলে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকা থেকে বিরত থাকতে হবে। পানি খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না। দীর্ঘ ক্ষন একই ভাবে শোয়া যাবে না এবং পা ঝুলিয়ে বসবেন না। প্রয়জনে পায়ের নীচে টুল ব্যবহার করুন।  

গর্ভাবস্থার দ্বিতীয়  ত্রৈমাসিকের যত্ন (৪-৬মাস)

গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ৩ মাসকে সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার বলা হয়। এই সময় মায়েদের বমি ভাব, অস্বস্তি অনেকাংশে কমে যায়।

খাদ্য ও পুষ্টি

২য় ত্রৈমাসিকে ভ্রুণের বিকাশ দ্রুত হয়। তাই এই সময় মায়ের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত খাবারের দরকার। বিশেষ করে তখন ক্যালসিয়াম, আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করা উচিত।  একজন গর্ভবতী নারীকে এই সময় প্রথম ত্রৈমাসিকের চেয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ ক্যালরি পরিমাণ বাড়তি খাবার খেতে হবে। দিনে ৩ বেলা খাবারের পাশাপাশি ২ বার হালকা নাস্তা করতে হবে।  যেহেতু এই সময়ে বাচ্চার ব্রেইন ও চোখ গঠিত হয় তাই ভিটামিন ডি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড  প্রচুর খেতে হবে। ভিটামিন ডি এর জন্য খাবার তালিকায় দুধ, লাল চালের ভাত ও চাল আটার রুটি রাখুন। ওমেগা ফ্যাটি এসিডের একটি ভালো উৎস হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ এবং তিসির তেল। আমাদের দেশীয় মাছের পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ খান।  তিসির তেল সালাদে দিয়ে খেতে পারেন।  এই সময় বাচ্চার হাড় ও মাংসের গঠন হয়। তাই মায়েদের ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের গুরুত্ব অনেক। ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার যেমন দুধ, দই, চিজ খাদ্য তালিকায় যুক্ত রাখতে হবে।  এ সময়ে বাচ্চার থাইরয়েড গ্ল্যান্ড কাজ করা শুরু করে আর থাইরয়েডের জন্য আয়োডিন অতীব প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। শুধু আয়োডিন যুক্ত খাবার খেলে আয়ডিনের চাহিদা পূরন হয় না, তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়োডিনের ট্যাবলেট খেতে হবে। পাশাপাশি মিনারেল ও ভিটামিন খেতে হবে। 

আসুন জেনে নেই ২য় ত্রৈমাসিকে গর্ভবতী নারীর খাবার তালিকা কেমন হবে। 

দৈনিকঃ ১৯০০ ক্যালরি 

সকালের নাস্তা( ৭টা-৮টা) 

  • রুটি/পাউরুটি- ৯০ গ্রাম(৩পিস)
  • ডিম ১টা/ মাংস- ২ টুকরো
  • সবজি- ইচ্ছেমতো

সকাল ১০-১১ টা

  • দুধ- ১কাপ
  • বিস্কুট/মুড়ি/ নুডলস ৩০ গ্রাম
  • ফল 

দুপুরের খাবার

  • ভাত- আড়াই কাপ(৩০০ গ্রাম)
  • মাছ/মাংস-৮০ গ্রাম
  • ডাল-১কাপ
  • সবজি- ইচ্ছেমতো

বিকেলের নাস্তাঃ সেমাই/নুডলস/ ছোলামুড়ি/ কেক- ৪০ গ্রাম

রাতের খাবার

  • ভাত-আড়াই কাপ( ৩০০ গ্রাম)
  • মাছ/মাংস-৮০ গ্রাম
  • ডাল-১ কাপ
  • সবজি- ইচ্ছেওমতো

শোয়া আগেঃ দুধ-১কাপ 

দ্বিতীয় ৩ মাসে সাধারণ সমস্যা ও তার প্রতিকার

গর্ভবতী নারীদের বেশির ভাগ ই দ্বিতীয় ৩ মাসে একটু ভালো বোধ করেন। বমি বমি ভাব কিছুটা কমে সে, অস্বস্তি বোধ অ অনেকের চলে যায়। বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে পেট বড় হতে থাকে এবং বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে নারীদের শারীরিক সমস্যা এক নয়। তাদের ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা হতে পারে। ৪-৬ মাসের মধ্যে যে যে সাধারন সমস্যা গুলো দেখা যায় সে গুলো হলো 

  • কোমড় ব্যথা
  • হাত ও আঙুলে ব্যথা, পায়ে খিল ধরা
  • পেট, স্তন, নিতম্ব এবং উরুতে দাগ পড়া
  • স্তন বৃত্ত কালো হয়ে যাওয়া
  •  মুখে ছোপ ছোপ দাগ পড়া

প্রতিকারঃ এই বিষয় গুলো সব গুলো খুব সাধারণ। 

  • কোমড় ও আঙুলের ব্যথা উপশমের জন্য হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও সুষম খাবার খান। 
  • দাগের জন্য কোন লোশন ব্যবহার করতে পারেন। পায়ে বেশি বেশি খিল ধরলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 

গর্ভাবস্থার ৩য় ত্রৈমাসিকের যত্ন (৭-৯মাস)

গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস কে থার্ড ট্রাইমেস্টার বা ৩য় ত্রৈমাসিক বলা হয়। 

গর্ভাবস্থার শেষ ধাপে ভ্রূন তার চূড়ান্ত বৃদ্ধি লাভ করে। এই সময়ে মায়ের অধিক যত্ন ও পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন। 

এই সময় হবু মায়ের সুষম খাবার খেতে হবে। প্রোটিন ও শাকসবজি খুব বেশি জরুরি। এগুলো কোন ভাবে ই খাদ্য তালিকা থেকে বাদ যাবে না। কোষ্ঠ কাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পানি খেতে হবে। এই সময় খেজুর ও রসুন খাবেন। রসুন প্রি ম্যাচুর ডেলিভারির ঝুকি কমায় এবং খেজুর নরমাল ডেলিভারিতে সহায়তা করে। এই সময় রক্ত স্বল্পতা রোধে প্রচুর আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়। মায়ের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত বাদাম, কলা পালং শাক, মটর শুটি, ডাল, ডাবের পানি রাখতে হবে। আয়রণ শোষণের জন্য প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। 

তাছাড়া অন্যান্য খাবার তো আছে ই, সাথে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে। 

আসুন জেনে নেই ৩য় ত্রৈমাসিকে গর্ভবতী নারীর খাবার তালিকা কেমন হবে। 

দৈনিকঃ ২১০০ ক্যালরি

সকালের নাস্তা( ৭টা-৮টা)

  • রুটি/পাউরুটি-১২০গ্রাম(৪পিস)
  • ডিম ১টা/ মাংস- ২ টুকরো
  • সবজি- ইচ্ছেমতো

সকালে ১০-১১ টা

  • দুধ- ১কাপ
  • বিস্কুট/মুড়ি/ নুডলস ৬০ গ্রাম
  • ফল 

দুপুরের খাবার

  • ভাত- ৩ কাপ(৩৬০ গ্রাম)
  • মাছ/মাংস-১০০ গ্রাম
  • ডাল-১কাপ
  • সবজি- ইচ্ছেমতো

বিকেলের নাস্তাঃ

  • দুধ/ দুধের তৈরি নাস্তা- ৬০ গ্রাম
  • ডালের তৈরি নাস্তা- ৬০ গ্রাম

রাতের খাবার

  • ভাত-৩ কাপ( ৩৬০ গ্রাম)
  • মাছ/মাংস-১০০ গ্রাম
  • ডাল-১ কাপ
  • সবজি- ইচ্ছেওমতো

শোয়া আগেঃ দুধ-১কাপ 

শেষ ৩ মাসে সাধারণ সমস্যা ও তার প্রতিকার

শেষের ৩ মাস মায়েদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। গর্ভের বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে মায়ের চলাফেরা ধীর হতে শুরু করে। গর্ভবতী মায়েরা তখন অস্বস্তি বোধ করেন। এই সময়ে অনেক জটিল পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। তাই এই সময়ে মা ও শিশুর সুরক্ষায় সবার সচেতন হওয়া জরুরি। এই সময়ে মায়েদের যে সব সাধারন সমস্যা দেখা দিতে পারে তা হলোঃ 

  • ঘুমের সমস্যা
  • নাভি ছড়িয়ে যাওয়া
  • বুক জ্বালাপোড়া
  • স্তন নরম হয়ে যাওয়া
  • আঙ্গুল, মুখ ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া
  • রক্ত ক্ষরণ
  • দ্রুত হার্টবিট

প্রতিকারঃ 

  • গর্ভাবস্থার শেষ সময়ে এই লক্ষণ গুলো সাধারণ। তবে খেয়াল রাখা জরুরি, যদি সেটা স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত করে তবে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
  • বুক জ্বালা পোড়ার হলে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা পরিবর্তন করুন। তেলে ভাজা ও চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করুন। বেশি সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টাসিড  খেতে পারেন। 

গর্ভকালীন সময়ে ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি

গর্ভকালীন সময়ে কিছু গুরুত্বপূর্ন খাদ্য উপাদান রয়েছে যে গুলো প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুষম খাবারের পাশাপাশি অবশ্যই রাখতে হবে। গর্ভবতী মায়ের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকার পাশাপাশি এই খাদ্য উপাদান ভ্রূণের বিকাশ সাধনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম ও আয়রণের প্রয়োজনীয়তা  শুধু খাবার থেকে মিটে যায় না। এর জন্য গর্ভবতী মায়ের এই সাপ্লিমেন্টগুলোর ট্যাবলেট বা বড়ি খেতে হয়। ক্রম বর্ধমান শিশুর বিকাশের জন্য এই সাপ্লিমেন্ট গুলো খুবই গুরুত্ব পূর্ন

নীচে প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্টগুলোর নাম ও তাদের উৎস ও কাজের একটি  তালিকা দেওয়া হলো 

খাদ্য উপাদান কাজ যে সব খাবারে পাওয়া যায়ট্যাবলেট সেবনের নিয়ম
ফলিক এসিডশিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্র গঠনে সাহায্য করে। পালং শাক, পুঁইশাক,পাট শাক, কচু শাক, মেথি শাক, সজনে পাতা, লাল শাক, নটে শাক, সবুজ ডাঁটা শাক, মুলা শাক ও লাউ শাক,বরবটি, মটরশুঁটি, ঢেঁড়স, শিম, ফুলকপি,বাঁধাকপি,ব্রকলি,ছোলার ডাল,মাসকলাই ডাল ও মুগ ডাল, কমলা,চিনাবাদামপ্রতিদিন ০.৪০ মিলিগ্রাম এর একটি ট্যাবলেট(ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)
ক্যালসিয়াম গর্ভের শিশুর হাড় গঠনের জন্য সহায়ক এবং এর অভাবে গর্ভের শিশুর হাড় ভঙ্গুর হতে পারে।দুধ, টক দই ও পনির, টাকি, রুই, কাতলা, শোল, শিং, টাটকিনি, পারশে, পুঁটি, চান্দা, কই, কাচকি, মলা, চেলা, মৃগেল, মেনি, চাপিলা, খলিশা, বাচা, ফলি, বাটা, ট্যাংরা, ভেটকি, রূপচাঁদা ও চিংড়ি, ছোলা ও মাসকলাই।সয়াবিন ও টফু, যব, কাউন, চিঁড়া ও গমলাল শাক, পুঁই শাক, নটে শাক, বকফুল শাক, মালঞ্চ শাক, সবুজ ডাটা শাক, লাউ শাক, কচু শাক, সজনে পাতা ও মেথি শাক,তিল, তিসি ও সরিষাগর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের পর থেকে প্রতিদিন ২ বেলা করে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবন করবেন। (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)
আয়রণ মা ও শিশুর রক্ত শুণ্যতা রোধ করে, শিশুর বিকাশ ও গঠনে সাহায্য করে। নবজাকমের ওজন কম হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।গরু ও খাসির মাংস,চাপিলা, ট্যাংরা, কাচকি, মলা, টাটকিনি, শিং, ফেসা ও চেলা মাছ,ডিম,দুধ, পনির,মটর, ছোলা, মাসকলাই, মুগ,মসুর,চিনাবাদাম,পেস্তাবাদাম,পাট শাক, লাল শাক, সবুজ শাক, সবুজ ডাটা শাক, নটে শাক, সবুজ কচু শাক, চুকাই শাক, বরবটি পাতা, মালঞ্চ শাক, বকফুল শাক, মূলা শাক, লাউ শাক, পালং শাক , পুঁই শাক,আলু, ব্রকলি, মটরশুঁটি, মাশরুম,খেজুর, নারিকেল (শুকনা) ও আখরোট, বাজরা, যব, কাউন, ভুট্টা, চিড়া, গম ও লাল চালতিল, সরিষা, তিসি, সয়াবিন, মিষ্টিকুমড়া বীজ, সূর্যমুখী বীজ, পদ্ম (শুকনা) ও চিলগোজাদৈনিক ৬০ মিলিগ্রাম করে আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)
জিংকশরীরের কোষ গঠনে সহায়তা করেডাল, ছোলা, ডিম, আমন্ড, কাজু, চিনা বাদাম, শিমের বিচি, মুরগির মাংস, গরুর মাংস,দুধদৈনিক ৭০ মিলিগ্রাম করে জিংক ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)
ভিটামিন ডি মা ও শিশুর শরীরের পেশি, হাড় ও দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সূর্যের আলো থেকে ত্বকে সৃষ্টি হয়, ডিম, মাংস এবং মৃগেল, রুই, তেলাপিয়া মাছ। ফর্টিফাইড ভোজ্য তৈল। প্রাকৃতিক ভাবে সূর্য থেকে পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ঔষধ সেবনের  প্রয়োজনীয়া নেই। তবে শরীরে এর ঘাটতি থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। 
ভিটামিন এ এর অভাবে দৃষ্টিশক্তির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়দুধ,দই ও পনিরলাল, হলুদ ও সবুজ শাকসবজি। যেমন: গাজর, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু, লাল শাক, কচু শাক ও পালং শাকরঙিন ফলমূল। যেমন: আম, পাকা পেঁপে, তাল, ডেউয়া ও বাঙ্গিডিমতৈলাক্ত মাছখাবার থেকেই এই সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। তাই আলাদা করে ভিটামিন এ ট্যাবলেট সেবনের প্রয়োজন নেই। মনে রাখবেন গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভিটামিন এ সেবনে গর্ভের শিশুর চোখ, মাথার খুলি, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের মতো অঙ্গে জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
ভিটামিন সি মা ও শিশুর ত্বক, হাড় ও রক্তনালীকে সুস্থ রাখে।আমলকী, আমড়া, জাম, জলপাই, লেবু, জাম্বুরা, পেয়ারা, কমলা ও মাল্টা,কাঁচা মরিচ ও ধনে পাতা,লাল ও সবুজ ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, কাঁকরোল ও আলুখাবার থেকেই এই সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তাই আলাদা করে ভিটামিন সি ট্যাবলেট সেবনের প্রয়োজন নেই। তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে বিশেষভাবে তৈরি করা মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেটে ৭০ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন সি যোগ করা থাকে এটা খেতে পারেন
তরলঅ্যামনিয়োটিক ফ্লুইডের মাত্রা ঠিক রাখে, ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে। পানি, ডাবের পানি, ভেজিটেবল স্যুপ, মরগীর স্যুপ

কিছু খাবার রয়েছে যে গুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া ঠিক না। বিশেষ করে প্রথম ৩ মাস। তাতে গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে। যেমন-

  • কাঁচা পেপে,  আনারস খাবেন না। 
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন গর্ভপাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। তাই যথাসম্ভব চা, কফি এড়িয়ে চলবেন
  • মদ্যপান, ধূমপান, এলকোহল সম্পুর্ন ভাবে নিষিদ্ধ।       
  • এই সময় সামুদ্রিক মাছ কম খাবেন। সামুদ্রিক মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকে বিধায় ভ্রুণের মস্তিষ্ক বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। 
  • এই সময় প্রণিজ প্রোটিন ভালো করে সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত। আধা সেদ্ধ মাংস ও ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ডিম ও মাংসে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ও লিস্টেরিয়া থাকে যার কারণে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। 

গর্ভাবস্থায় নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

মায়ের শারীরিক যত্নের কথা মোটামুটি আমরা সবাই জানি ও মেনে চলি। কিন্তু মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার বিষয় টা অনেকেই জানেন না, বা জানলেও গুরুত্ব দেন না। কিন্তু একজন গর্ভবতী নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া সব চেয়ে বেশি  গুরুত্বপূর্ন।

গর্ভবতী মায়েদের শরীরেপ্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরে এর প্রভাব পড়ে। বমি বমি, অস্বস্তি, খাওয়ার অরুচির কারণে প্রথম ০৩ মাস শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। শারীরিক দুর্বলতা তখন মানসিক ভাবে দুর্বল করে দেয়। তাই অনেক সময় গর্ভবতী মায়েরা খিটখিটে মেজাজের হয়ে যান। মাঝে মাঝে শরীরের ভালো বোধ করেন, পরক্ষণেই শরীর খারাপ লাগে। এই অবস্থায় অনেক মায়েরা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন না। দেখা যায় অনেক মা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। মাঝে মাঝে হাসেন, মাঝে কাঁদেন।

একজন গর্ভবতী মায়ের মানসিক অবস্থা তার গর্ভস্থ্য বাচ্চার শারীরিক উন্নতির উপর প্রভাব পড়ে। মানসিক ভাবে হতাশ হলে গর্ভস্থ্য বাচ্চার শরীরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

এই সময় তাই পরিবারের সদস্যদের গর্ভবতী মায়ের মানসিক বিষয় বিবেচনা করা উচিত। সব সময় তাকে সময় দেওয়া ও সহযোগীতা করা উচিত। পরিবারের সকলে বিশেষ করে স্বামীদের উচিত গর্ভবতী নারীর সাথে এমন আচরণ না করা যেন সেটা তার মনে চাপ সৃষ্টি করে। 

তাই একজন মা ও শিশুর শারিরিক ভাবে সুস্থ্যতার জন্য তার মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও যত্নশীল হতে হবে। পরিবারের গর্ভবতী নারী যেন সব সময় প্রফুল্ল থাকেন সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। 

গর্ভবতী মায়ের চেকআপ

গর্ভবতী মায়েদের যত্নের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ হচ্ছে নিয়মিত শারীরিক চেক। একজন স্বাভাবিক গর্ভবতী পুরো অন্তঃ স্বত্ত্বা সময়ে মোট চারবার এএনসি (গর্ভকালীন) চেক আপ করাবেন , এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এবং বাংলাদেশ সরকার কতৃক নির্ধারিত। কিন্তু ঝুকি পূর্ণ গর্ভাবস্থায় একজন নারীর আরো ঘন ঘন চেক আপের প্রয়োজন হয়। ৪ বার চেক আপের কর্ম সূচী নিম্নরুপঃ 

চেক আপ নং ময় 
১ম৪র্থ মাসে (যখন ১৬ সপ্তাহ)
২য়৬ষ্ট মাসে (যখন ২৪ সপ্তাহ)
৩য়৮ম মাসে (যখন ৩২ সপ্তাহ)
৪র্থ ৯ম মাসে (যখন ৩৬ সপ্তাহ)

গর্ভধারনের পর পরই একজন ডাক্তারের নিকট যাওয়া উচিত। এ সময় ছোট কয়েকটি পরীক্ষা, যেমন রক্তের হিমোগ্লোবিন, সুগার ও গ্রুপ করে রাখা উচিত। মায়ের শারিরিক অবস্থা তদারকি করা, জটিলতা আছে কি না সেটা বুঝে নেওয়া উচিত। 

প্রয়জনীয় পরীক্ষা গুলো হলো –

  • আলট্রানোসগ্রামঃ গর্ভবতী মায়ের আলট্রানোসগ্রাম করা জরুরি। পুরো গর্ভাবস্থায় কম পক্ষে ৩ বার করতে হবে। তবে আরো বেশি করলে ক্ষতি নেই। প্রথম আল্ট্রা ৭/৮ সপ্তাহে করে নেওয়া ভালো। তবে প্রথম বার চেক আপে অর্থাৎ গর্ভের ১৬ সপ্তাহের মধ্যে করে নেওয়া জরুরি। তাতে ভ্রূণের সংখ্যা, অবস্থান, প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। দ্বিতিয় আল্ট্রা ১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে করে নিতে হবে। তাতে শিশুর শরীরে কোন ত্রুটি আছে কিনা তা জানা যায়। সব শেষে ৩৬-৩৮ সপ্তাহে ৩য় আলট্রা করে নিতে হবে। তাতে শিশুর অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। 
  • রক্ত পরীক্ষাঃ গর্ভবতী নারীর রক্ত পরীক্ষা একটি একান্ত প্রয়োজনীয় পরীক্ষা। গর্ভাবস্থায় মোট ৪ বার রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে আরো বেশি করতে হয়। রক্ত পরীক্ষা দ্বারা মায়ের রক্তের গ্রুপ, RH  ফ্যাক্টর, সুগার, সিবিসি, হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ কি না ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। গর্ভধারণের পর পর ই যতো দ্রু সম্ভব সব গুলো পরীক্ষা করে নিতে হবে। এর পর ২৪-২৮ সপ্তাহে, ৩২ সপ্তাহে এবং শেষবার ৩৬-৩৮ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা গুলো করতে হয়। তাছাড়া চেক আপের সময় ডাক্তার পরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশাবলী জানিয়ে দেন। 
  • মায়ের ওজন পরীক্ষাঃ গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন বৃদ্ধি পাওয়া তা স্বাভাবিক। চেক আপের সময় ওজন মেপে নেওয়া হয় যা উচ্চতার সাথে সম্পর্কিত। বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে মায়ের ওজন বাড়তে থাকে। পুরো গর্ভাবস্থায় ১১-১৫ কেজি অজন বৃদ্ধি পায়। তবে সকল মায়ের ক্ষেত্রে তা সমান নয়। ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে যেমন জটিলতা তৈরি হবে আবার অজন অতিরিক্ত কমে গেলেও বিপদ হতে পারে।

 একজন গর্ভবতী মায়ের আদর্শ বৃদ্ধি এইরকম হবে-

১ম ত্রৈমাসিকসামগ্রিকভাবে ০.৫-২.৫ কেজি
২য়  ত্রৈমাসিকপ্রতি সপ্তাহে ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি
৩য়  ত্রৈমাসিকপ্রতি সপ্তাহে ১৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি

নোটঃ গর্ভের শিশু নড়া চড়া করে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা খুব জরূরি। শিশুর নড়াচড়া যদি 

অনেক সময় বন্ধ থাকে, অনেক কম নড়ে বা অনেক বেশি নড়ে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। আল্ট্রাসনোগ্রাম ও কার্ডিওটোকোগ্রাফি পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুর বিকাশ ওহৃদস্পন্দন পর্যবেক্ষণ করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।   

গর্ভাবস্থায় টিকা

গর্ভাবস্থায় কেবলমাত্র একটি টিকা নিতে পারেন আর তা হলো টিটি বা টিটেনাস ট্রাইফয়েড। যদি টিটি টিকার ৫টি ডোজ না নেয়া থাকে, তাহলে গর্ভধারণে ১ম ও ৬ষ্ঠ মাসে টিটি টিকার দুটি টিকা নিতে হবে। আর যদি আগেই দুই ডোজ নেয়া থাকে তাহলে পরবর্তীতে গর্ভাবস্থায় মাত্র একটি বুস্টার ডোজ নিতে হবে।

গর্ভবতী নারীর ব্যায়াম

মায়ের শারীরিক সুস্থ্যতা ও শিশুর ভালো বৃদ্ধির জন্য হালকা ব্যায়াম করা গুরুত্ব পূর্ণ। নরমাল ডেলিভারির সুবিধার্থে অ শিশুর মাথা নীচের দিকে আনার জন্য করণীয়-

  • প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট হাটুন
  • হাত ও হাটুতে ভর দিয়ে ঘর মোছার ভঙ্গিতে উপুর হয়ে থাকুন
  • যোগ ব্যায়াম করুন
  • সাঁতার চেষ্টা করুন
  • শোয়ার সময় চিৎ হয়ে না শুয়ে পাশ ফিরে শোবেন। বাম কাত হয়ে শোয়া সবথেকে নিরাপদ।

কয়েকটি বিপদ চিহ্ন রয়েছে যে গুলো দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। যেমন–

  • দ্রুত ওজন কমে যাওয়া
  • দ্রুত ওজন বেড়ে যাওয়া
  • খুব বেশি পেট ব্যথা
  • রক্ত স্রাব 
  • অতিরক্ত মাথা ঘোরা ও চোখে ঝাপসা দেখা। 
  • বিলম্বিত প্রসব
  • খিচুনি
  • ভীষণ জ্বর

রাজশাহীর যেকোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তথ্য, সিরিয়াল ও আমাদের সেবা পেতে যোগাযোগ করুন।: 01317823580

হেলথপ্ল্যান বিডি’র সেবা কেন নিবেন?

১. **দক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তার**: আমরা দক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে কাজ করি, যারা আপনাকে সর্বোত্তম চিকিৎসা প্রদান করতে বদ্ধপরিকর এবং তাদের সাথে আমাদের মাধ্যমে সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন।

২. **২৪/৭ সাপোর্ট**: জরুরি পরিস্থিতিতে আমরা ২৪/৭ সাপোর্ট প্রদান করি, যাতে আপনি যেকোনো সময় আমাদের কাছে সাহায্য নিতে পারেন।

৩. **ব্যক্তিগত মনোযোগ**: প্রতিটি রোগীকে আমরা ব্যক্তিগত মনোযোগ প্রদান করি, যাতে তারা যথাযথ চিকিৎসা পেতে পারেন।

৪. **ডিজিটাল মেডিকেল রেকর্ডস**: আমরা রোগীদের সমস্ত মেডিকেল রেকর্ড ডিজিটালি সংরক্ষণ করি, যাতে তারা যেকোনো সময় তাদের তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে ইজি এ্যাক্সেস করতে পারেন।

৫. **ফিডব্যাক ও রেটিং সিস্টেম**: আমাদের সেবায় রোগীরা ডাক্তারদের ফিডব্যাক দিতে ও রেট করতে পারেন, যা আমাদের সেবার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।

৬. **স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রোগ্রাম**: আমরা স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ও ইভেন্ট আয়োজন করি।

৭ **সাশ্রয়ী খরচ ও কাস্টোমাইজড সেবা প্রদান **: আমাদের সেবার খরচ সাশ্রয়ী এবং আমরা বিভিন্ন সেবার অপশন প্রদান করি, যাতে আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী সেবা নিতে পারেন।

 আমাদের সেবা পেতে যোগাযোগ করুন।: 01317823580

আপনার মতামত দিন!