সন্তান জন্ম দেওয়া সব দম্পতিদের কাছেই একটি আনন্দদায়ক এবং সুন্দর অভিজ্ঞতা। দম্পতি হোক আর পুরো পরিবার হোক, সন্তান ছাড়া যেন সব কিছু অপূর্ণ ই থাকে। একটি সন্তানের আগমনী বার্তা একটি সুন্দর স্বপ্ন। এই সুন্দর স্বপ্নের সূচনা হয় একটি নারীর সার্থক গর্ভধারণের মাধ্যমে। আর সার্থক গর্ভধারণ অনেকাংশে একটি ভালো পরিকল্পনার উপর নির্ভর করে।
একজন মা ও তাঁর শিশুর সুস্থ্যতা প্রত্যেক টা পরিবারের কাম্য। তাই সন্তান নেওয়ার আগে কিছু পরিকল্পনা প্রয়োজন।
একটি দম্পতি যখন সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে কিছু বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
আসুন একজন নারীর গর্ভধারণের পূর্ব প্রস্তুতি কি কি হতে পারে তা জেনে নেইঃ
- স্বামী-স্ত্রীর সিদ্ধান্তঃ সন্তান নেওয়ার জন্য স্বামী স্ত্রী দুজনের ই সম্মতি বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে সঙ্গীর মতামতের গুরুত্ব দিন এবং নিজের মতামত প্রকাশ করুন। একটি সুন্দর আলোচনার মাধ্যমে একটি সুন্দর স্বপ্নের সূচনা করুন।
- মানসিক স্বাস্থ্যঃ গর্ভ ধারণের ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য একটি উল্লেখযোগ্য বিবেচ্য বিষয়। মানসিক অবসাদে ভোগা একজন নারী কখনোই একজন সুস্থ্য ও স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না। তাছাড়া মানসিক ভাবে অসুস্থ একজন নারী গর্ভকালীন, প্রসব কালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জটিলতায় ভুগেন। তাই একজন নারীর গর্ভধারণের পূর্বে ই তার মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করবেন। এক্ষেত্রে সঙ্গীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে একজন নারী সব সময় প্রফুল্ল থাকবেন। পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত বিশ্রাম নিবেন।
- ডাক্তারের শরণাপন্নঃ গর্ভধারণের পূর্বে ই একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ এর নিকটে স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বুঝিয়ে বলুন এবং পরামর্শ গ্রহণ করুন। আপনার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন যে আপনি সন্তান নিতে চাচ্ছেন। গাইনী ডাক্তার আপনার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষন, বয়স বিবেচনা করে সুপরামর্শ দিবেন। আপনি যদি কোন খাবার বড়ি বা অন্য কোন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে অবলম্বন করে থাকেন তাহলে ডাক্তার কে জানাবেন। ডাক্তার আপনাকে টিকা, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবানাচরণের পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করবেন।
- টিকা গ্রহণঃ গর্ভধারণের পূর্বে টিকা নেওয়া খুব জরুরি। বাচ্চার সুস্থ্যতা ও সুরক্ষার জন্য টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। রুবেলা, চিকেনপক্স এবং হেপাটাইটিস বি এর টিকা গুলো ভবিষ্যৎ বাচ্চার রোগ গুলো প্রতিরোধ করে। আরো কিছু গুরুত্ব পূর্ণ টিকা রয়েছে যে গুলো খুব দরকারি। এমএমআর, টিডিএপি এবং ফ্লু এর টিকা গুলো গর্ভধারণের পূর্বে ই নিয়ে নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় এই টিকা গুলো নিলে ঝুকির কারণ হতে পারে।
- শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করুনঃ সন্তান নেওয়ার আগে আরেকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। সেটা হলো আপনার শারীরিক অবস্থা। কোন রোগ যেমন ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, খিচুনি আছে কি না। আগের প্রেগন্যান্সিতে কোন সমস্যা হয়েছে কি না এসব বিষয় বিবেচনা করুন। আবার অনেক সময় ওজন বেশি বা কম হতে পারে। ওজন স্বাভাবিক না হলে গর্ভের বাচ্চার নানা সমস্যা হতে পারে। ওজন বেশি হলে গর্ভাবস্থায় কমানো মারাত্নক জটিলতা তৈরি করে। তাই সমস্যা এড়াতে গর্ভধারণের পূর্বে ই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন এবং আপনার রোগ বা সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করুন।
- ব্যায়ামঃ গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে প্রসবকালীন সময় পর্যন্ত অনেক দীর্ঘ একটা সময় শরীরের উপর অনেক ধকল যায়। তাই এই ধকল মোকাবেলার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং শরীর গর্ভ ধারণের জন্য ফিট রাখুন।
- আর্থিক প্রস্তুতিঃ গর্ভে বাচ্চা থাকা কালীন সময়ে মায়ের চেক আপ, খাবার, ঔষধ এবং প্রসব কালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ের জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। এই সব বিষয় সুন্দরভাবে মোকাবেলা করার জন্য আর্থিকভাবে প্রস্তুত থাকুন।
- খাদ্যাভ্যাসঃ গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীর যে বিষয় টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পূর্ণ তা হলো খাদ্যাভাস। একটি শিশু গর্ভে থাকা অবস্থায় সকল প্রকার পুষ্টির চাহিদা মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। শিশু বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, গর্ভাস্থায় একটি শিশু যদি সঠিক পুষ্টি না পায় তাহলে সে শিশু অপুষ্টি নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। আর শিশুর সারা জীবন পুষ্টি হীনতায় ভুগতে পারে। তাই একজন মেয়ে গর্ভধারণের পূর্বে ই তার খাদ্যাভাস ঠিক করুন।
যে সব খাবার গর্ভধারণের পূর্বে খাওয়া শুরু করতে হবে–
- ফলিক এসিডঃ ফলিক এসিড এমন একটি খাদ্য উপাদান যা একজন শিশুর শারীরিক গঠনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। এর অভাবে গর্ভের শিশু ব্রেইন ও মেরুদন্ডে মারাত্নক ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। শিশু গর্ভে আসার আগেই মায়ের ফলিক এসিডের অভাব পূরণ করা দরকার। আর এর অভাব পুরণ করার জন্য কয়েক মাস আগেই ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করতে হবে। যেমন ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ করতে পারেন এই ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবারের মাধ্যমে। ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও খেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলবেন। আপনার শারীরিক অবস্থা, ওজন বা পারিবারিক ইতিহাসের ভিত্তি করে নির্দিষ্ট ডোজ নির্ধারন করে হবে।
- আয়রণঃ আয়রণ হলো গর্ভের শিশুর জন্য অন্যতম খাদ্য উপাদান। শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রণ না থাকলে গর্ভবতী নারী রক্ত স্বল্পতায় ভুগেন। ফলে গর্ভের শিশুর উপর মারাত্নক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গর্ভবতী নারীরা রক্ত স্বল্পতায় ভুগলে প্রিম্যাচুর বাচ্চা প্রসব করার সম্ভাবনা থাকে। আবার বাচ্চার ওজন কম হতে পারে। অনেক সময় বাচ্চা মৃত জন্মায়। তাই গর্ভধারণের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আয়রণ যুক্ত খাবার সহ আয়রন যুক্ত ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। এর জন্য চিকিৎসকের নিকট হতে পরামর্শ গ্রহণ করেন।
- ভিটামিন ডিঃ এর অভাব থাকলে বাচ্চার হাড়, দাঁত ও মাংসপেশী গঠনে সমস্যা হয়। তাই গর্ভধারণের আগে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর কাছে পরামর্শ নিন। যদি শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকে সে ক্ষেত্রে পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করুন।
- পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারঃ সন্তান গর্ভে আসার পূর্বে ই স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের অভ্যাস করতে হবে। বেশি করে শাক সবজি, ফলমূল ও আমিষযুক্ত খাবার খেতে হবে। সাদা চাল, সাদা আটার পরিবর্তে লাল চাল ও লাল আটা খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। ভাত অল্প করে খাবেন। সুষম খাবারের ব্যবস্থা রাখবেন যেন শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি না থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান করবেন।
যে সব খাবার পরিহার করতে হবে
একদিকে যেমন প্রয়োজনীয় খাবার খেতে হবে অন্য দিকে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হবে এই রকম খাদ্যাভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। যেমন ক্যাফেইন যুক্ত খাবার। এর ক্যাফেইনের কারণে বাচ্চার ওজন কম হয়, অনেক সময় গর্ভপাতের ঘটনা ও ঘটে । ক্যাফেইন যুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে
- চা,
- কফি,
- চকলেট,
- সফট ড্রিংকস,
- এনার্জি ড্রিংকস।
এই সব খাবারের প্রতি মায়েরা অভ্যস্ত হয়ে গেলে সে গুলো বাদ দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই মায়েদের উচিত গর্ভধারণের পূর্বে ই সে গুলো পরিহার করা। এছাড়া
- অতিরিক্ত চর্বি ও চিনি যুক্ত খাবার,
- ফাস্ট ফুড,
- ফরমালিনযুক্ত খাবার এবং
- প্রসেসড ফুডের অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত।
স্বামী-স্ত্রী কারো যদি ধূমপান ও এলকোহলে আসক্তি থাকে তাহলে গর্ভধারণের
পূর্বে ই বদ অভ্যাস গুলো ছাড়তে হবে।
- বয়স বিবেচনায় রাখুনঃ একটি সুস্থ্য বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য বয়স বিবেচনা করুন। সাধারণত পুরুষেরা ৫০ বছর পর্যন্ত সন্তান জন্ম দানে সমর্থ থাকেন। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে বলা হয় ৩০ বছর বয়স সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। এমন ভাবে বলা যেতে পারে-
- ৩০ বছর পর্যন্ত সন্তান ধারণের খুব ভালো ক্ষমতা থাকে
- ৩০ বছর বয়স হতে তা দ্রুত কমে যেতে থাকে এবং
- ৩৫ বছর বয়সে তা একেবারেই কমে যায়।
তাহলে বলা যায়, এই বয়স তা দম্পতি নির্ধারন করবেন তারা কয়টি বাচ্চা নিতে চান। একটি বা দুটি বাচ্চা নিয়ে যদি পরিবার গঠন যারা করতে চান তারা ৩০ বছর বয়সকে প্রাধান্য দিবেন, কিন্তু যারা একাধিক ২ বা ৩ এর অধিক সন্তান নিতে চান তারা অবশ্যই ৩০ বছর বয়সের পূর্বে বাচ্চা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিবেন। সকল দম্পতির ক্ষেত্রে এই রকম বয়স বিবেচনা সঠিক নাও হতে পারে। তাই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে নিজের শারীরিক অবস্থা ও বয়স নিয়ে আলোচনা করুন এবং পরামর্শ গ্রহণ করুন।
সর্বোপরি বলা যায় যে, দম্পতির জন্য সন্তান নেওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পূর্ণ মা ও সন্তানের সুস্থ্যতা নিশ্চিত করা। আর গর্ভধারণের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহন করলে মা ও সন্তানের সুস্থ্যতা অনেক তা ই নিশ্চিত করা যেতে পারে। তাই, গর্ভধারণের পূর্বে উপরের বিষয় গুলো অনুসরণ করে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
আপনার গর্ভকালীন জার্নিকে মসৃণ করতে আমাদের সেবা নিতে পারেন নির্ধিদায়। আমরা আপনাদের এই সন্তান নেওয়ার জার্নিকে আরো সমৃদ্ধ ও সহজ করতে সবসময় আছি আপনার পাশে। আমাদের সেবা পেতে এখনই যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।
রাজশাহীর যেকোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তথ্য, সিরিয়াল ও আমাদের সেবা পেতে যোগাযোগ করুন।: 01317823580
হেলথপ্ল্যান বিডি’র সেবা কেন নিবেন?
১. **দক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তার**: আমরা দক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে কাজ করি, যারা আপনাকে সর্বোত্তম চিকিৎসা প্রদান করতে বদ্ধপরিকর এবং তাদের সাথে আমাদের মাধ্যমে সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন।
২. **২৪/৭ সাপোর্ট**: জরুরি পরিস্থিতিতে আমরা ২৪/৭ সাপোর্ট প্রদান করি, যাতে আপনি যেকোনো সময় আমাদের কাছে সাহায্য নিতে পারেন।
৩. **ব্যক্তিগত মনোযোগ**: প্রতিটি রোগীকে আমরা ব্যক্তিগত মনোযোগ প্রদান করি, যাতে তারা যথাযথ চিকিৎসা পেতে পারেন।
৪. **ডিজিটাল মেডিকেল রেকর্ডস**: আমরা রোগীদের সমস্ত মেডিকেল রেকর্ড ডিজিটালি সংরক্ষণ করি, যাতে তারা যেকোনো সময় তাদের তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে ইজি এ্যাক্সেস করতে পারেন।
৫. **ফিডব্যাক ও রেটিং সিস্টেম**: আমাদের সেবায় রোগীরা ডাক্তারদের ফিডব্যাক দিতে ও রেট করতে পারেন, যা আমাদের সেবার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
৬. **স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রোগ্রাম**: আমরা স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ও ইভেন্ট আয়োজন করি।
৭ **সাশ্রয়ী খরচ ও কাস্টোমাইজড সেবা প্রদান **: আমাদের সেবার খরচ সাশ্রয়ী এবং আমরা বিভিন্ন সেবার অপশন প্রদান করি, যাতে আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী সেবা নিতে পারেন।
আমাদের সেবা পেতে যোগাযোগ করুন।: 01317823580