হারনিয়া কী
হারনিয়া লাতিন শব্দ। যার অর্থ ছিদ্র।
এর কারণে শরীরের কোন অঙ্গ বা টিস্যু যা স্বাভাবিক অবস্থান থেকে পরিবর্তন হয়ে দুর্বল বা ছিদ্রযুক্ত জায়গা দিয়ে বের হয়ে আসে। এটি সাধারণত পেট বা কুঁচকির আশেপাশে হয়ে থাকে।
হার্নিয়ার বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যেগুলির মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল:
- কুঁচকির হার্নিয়াঃ এটি নারীদের তুলনায় পুরুষদের বেশি হয়ে থাকে। এর ফলে অন্ত্র বা ফ্যাট, ইনগুইনাল ক্যানাল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।
- নাভির হার্নিয়াঃ এটি শিশুদের হয়ে থাকে, যখন অন্ত্র বা ফ্যাট নাভির চারপাশে বেরিয়ে আসে।
- ফেমোরাল হার্নিয়াঃ এটি সাধারনত উরুর উপরের অংশে দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারী বা যাদের অজন বেশি তাদের বিস্তৃত পেলভিক অংশের জন্য হয়ে থাকে।
- হায়াটাল হার্নিয়াঃ ডায়াফ্রামে হায়াটাস নামক একটি ছোট ছিদ্র থাকে, সেটা খাদ্যনালীকে পেটের সাথে খাদ্যনালীকে সংযুক্ত রাখে। হায়াটাল হার্নিয়া হলে সেই ছিদ্র দিয়ে সেটা দিয়ে পেটের উপরের অংশ টি বুকে উঠে যায়।
- এপিগ্যাস্ট্রিক হার্নিয়াঃ এই ধরণের হারনিয়া ছোট আকারের হলেও এই ছিদ্র গুলো একাধিক হয়ে থাকে। এর ফলে পেটের মাংশপেশিতে ছোট ছোট ছিদ্র হয়ে থাকে যার কারনে চর্বি বা অন্ত্রের অংশ বাইরে বেরিয়ে আসে।
- ভেন্ট্রাল/ইনসিসনাল হার্নিয়াঃ এটি সাধারণত কোন অস্ত্রোপাচারের পর দুর্বল অংশে হয়ে থাকে। এই ধরণের হার্ণিয়া হলে কোন অঙ্গ বা টিস্যু পেটের দুর্বল অংশ দিয়ে বেরিয়ে আসে।
হারনিয়া রোগের লক্ষণ
কোন কোন সময় হার্নিয়ার কোন লক্ষণ নাও থাকতে পারে। মেডিক্যাল পরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করা যায় না। তারপরেও কিছু লক্ষণ রয়েছে যা জানা থাকা জরুরি
- পেটের যে অংশে হারনিয়া হয় সেখানে ফুলে যাওয়া ও ব্যথা অনুভূত হওয়া
- ফোলা অংশে চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হয়।
- পেটের অস্বস্তি বাম দিকে, পাঁজরের নীচে
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- খাওয়া দাওয়ার অরুচি।
- ছোট বাচ্চাদের হার্নিয়া হলে ব্যথা বা অস্বস্তিতে কান্না করে, বিশেষ করে খাওয়ার পর বা শারীরিক পরিশ্রম করলে।
হারনিয়া রোগের কারণ
- বংশগত কারণে, পরিবারের হার্নিয়ার ইতিহাস থাকলে
- অতিরিক্ত ওজন হলে
- পেটের পেশি স্থিতিশীল না করে ভারী জিনিস তুললে
- ধূমপান করলে
- দীর্ঘস্থায়ী ও অতিরিক্ত কাশি হলে
- অতিরিক্ত হাঁচি হলে
- অনেক দিন ধরে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য হলে
হারনিয়া কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
সাধারণত হারনিয়া শারীরিক পরীক্ষা দ্বারা নির্ণয় করা যেতে পারে। ব্যথা ও ফোলাভাব অংশে ডাক্তার গণ পরীক্ষা করে সনাক্ত করেন এবং চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। যদি পরীক্ষা দ্বারা সহজে স্পষ্ট না হয় তখন ইমেজিং করা হয় যেমন পেটের আল্ট্রাসাউন্ড, সিটিস্ক্যান বা এম আর আই।
হারনিয়া অপারেশন কেন প্রয়োজন
হারনিয়া ভালো হয় না, এর থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় অপারেশন করা। অনেকেই মনে করেন ঔষধ সেবনে এই হারনিয়া ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু অপারেশনে না করলে বা দেরি করলে তা মারাত্নক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। অপারেশনে শরীরের স্বস্থান থেকে বিচ্যুত অঙ্গ বা অঙ্গের কোনও অংশকে পুনরায় যথাস্থানে ফিরিয়ে দিয়ে দুর্বল পারিপার্শ্বিক মাংসপেশি ও কোষকলাগুলোকে শক্ত ও টান টান করে দেওয়া হয়।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যদি হার্নিয়া ঠিক করা না হয়, তাহলে এটি বড় হতে পারে এবং সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সবচেয়ে খারাপ জিনিসটি ঘটতে পারে যখন অন্ত্রের অংশ পেটের একটি দুর্বল জায়গায় আটকে যায়। এতে অনেক ব্যথা, অসুস্থ বোধ করা এবং বাথরুমে যেতে সমস্যা হতে পারে। আটকে থাকা অন্ত্রে রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা টিস্যুকে মারা যেতে পারে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা যা ঠিক করার জন্য অবিলম্বে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন।
হারনিয়া অপারেশন
হারনিয়া অপারেশন ২ ভাবে করা হয়-
- ওপেন রিপেয়ার বা পেট কেটে অপারেশন
- এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক রিপেয়ার বা ছিদ্র করে অপারেশন
ওপেন রিপেয়ার বা পেট কেটে অপারেশন
এই পদ্ধতিতে পেটের চামড়া ও আবরন কেটে ফেলা হয়। যে স্থানে হার্নিয়া হয়েছে সেই ছিদ্র খুঁজে বের করা হয় এবং বের হয়ে আসা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আব্র পেটের ভিতর ঢুকিয়ে সুতা সেলাই করে দেওয়া হয়। একটি মেস বা কৃত্রিম জাল হারনিয়ার ছিদ্র স্থানে বসিয়ে দেয়া হয়। এই সময় রোগীকে জেনারেল বা রিজিওনাল এনেসথেসিয়া দেওয়া হয়।
এন্ডো-ল্যাপারোস্কোপিক রিপেয়ার বা ছিদ্র করে অপারেশন
এই পদ্ধতিতে বড় করে পেট কাটার পরিবর্তে এ ছোট ছিদ্র করে করা হয়। একটি ছিদ্র দিয়ে ক্যামেরা ঢুকিয়ে অন্যান্য ছিদ্র দিয়ে সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি ঢুকানো হয়। এই অপারেশনেও হারনিয়ার ছোট ছিদ্রটি খুঁজে বের করা হয় এবং সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়। পরে একটি মেস মাংস পেশীর দূর্বলতার স্থানে বসিয়ে দেয়া হয়।
পেটের ভিতরে গিয়ে অথবা পেটের মাংসপেশীর পেছনে গিয়ে এই অপারেশন করা হয়। এই ক্ষেত্রেও হার্নিয়ার ছিদ্রটি খুঁজে বের করা হয় এবং সুতা দিয়ে রিপেয়ার করা হয় এবং একটি মেস মাংসপেশীর দূর্বলতার স্থানে বসিয়ে দেয়া হয়। এই সময় রোগীকে জেনারেল এনেস্থেসিয়া দেয়া হয়। এই অপারেশনের পর রোগী দ্রুত সুস্থ্য হয়ে যায়।
HealthPlan BD হারনিয়া অপারেশন প্যাকেজ: সর্বোত্তম সেবা- সর্বনিম্ন খরচ
সর্বাধিক সেবা-সর্বনিম্ন খরচে HealthPlan BD হারনিয়া অপারেশন প্যাকেজ একটি পূর্ণাঙ্গ সেবা মূলক অফার যা হারনিয়া অপারেশনের সমস্ত চিকিৎসা ও পরিচর্যার জন্য প্রযোজনীয় সব সেবা অন্তর্ভুক্ত করে। এই প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য হলো সকল রকম বাজারি চার্জ থেকে মুক্তি পাওয়া এবং গ্রাহকদের সুবিধাজনক মূল্যে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা।
এই প্যাকেজের মাধ্যমে, হারনিয়া রোগী এবং তার পরিবার একটি তুলনামূলক কম অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারেন। হারনিয়া অপারেশন প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত সেবাগুলো সাধারণত নিম্নরূপ:
- সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা প্রদান
- নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ
- প্রাক- অপারেশন পরীক্ষা
- সাশ্রয়ী খরচে অপারেশন যাবতীয় চিকিৎসা ও সেবা
- অপারেশন পরবর্তী সেবা
- হাসপাতালে অবস্থান
- প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ (স্বনামধণ্য ব্র্যান্ডের)
- পরামর্শ ও সহায়তা।
আমাদের লক্ষ্য হলো সবার জন্য স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ অপারেশন সেবা প্রদান করা। HealthPlan BD এর সাথে থাকুন এবং নিশ্চিন্তে থাকুন।
এখানে ৩ ধরণের প্যাকেজ ব্যবস্থা রয়েছে। এক নজরে এই প্যাকেজের সুবিধা দেখে নিতে পারেনঃ
প্যাকেজ সমূহ | ওয়ার্ড/কেবিন | অবস্থান | প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ | খরচের পরিমাণ | এসি |
প্যাকেজ-১ | জেনারেল ওয়ার্ড | ৩দিন | ৩ দিন | ১৯,০০০/- | ✔ |
প্যাকেজ-২ | সিংগেল কেবিন | ৩দিন | ৩ দিন | ২৩,০০০/- | ✔ |
প্যাকেজ-৩ | ডাবল কেবিন | ৩দিন | ৩দিন | ২৬,০০০/- | ✔ |
কেন হেলথপ্ল্যান বিডি’র কাছ থেকে সার্জারীর প্যাকেজ সেবা নিবেন?
হেলথপ্ল্যান বিডি আপনাকে সার্জারীর জন্য একটি সম্পূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদান করে। আমাদের সার্জারী প্যাকেজের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা আপনাকে আমাদের সেবা নিতে উদ্বুদ্ধ করবে:
1. সুলভ মুল্যে দক্ষ ও অভিজ্ঞ সার্জন: আমাদের সার্জারী প্যাকেজের মাধ্যমে আপনি দক্ষ ও অভিজ্ঞ সার্জনদের দ্বারা চিকিৎসা সেবা পাবেন। আমাদের সার্জনরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি ব্যবহার করে চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন।
2. সম্পূর্ণ সাপোর্ট সিস্টেম: সার্জারী প্রক্রিয়া শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা আপনাকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট প্রদান করার জন্য বদ্ধপরিকর। আপনার প্রয়োজনীয় সকল প্রশ্নের উত্তর এবং আপনার অপারেশনটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য যতগুলো প্রিকশ্যান নেওয়া প্রয়োজন যতগুলো দিক খেয়াল রাখা দরকার তার সবগুলো আমাদের টিম সবসময় তা নিশ্চিত করবে।
3. স্বচ্ছ প্যাকেজ মূল্য: আমাদের সার্জারী প্যাকেজের মূল্য স্বচ্ছ এবং কোনও গোপন খরচ নেই। আপনি আগে থেকেই সমস্ত খরচ সম্পর্কে অবগত থাকবেন।
4. উন্নত প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম: আমাদের হাসপাতালগুলোতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়, যা নিশ্চিত করে যে আপনি সর্বোত্তম চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।
5. পরিচর্যা ও পুনর্বাসন: সার্জারীর পরে আমরা আপনাকে পূর্ণ পরিচর্যা এবং পুনর্বাসন সেবা প্রদান করি, যাতে আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
6. ডিজিটাল মেডিকেল রেকর্ডস: আপনার সমস্ত মেডিকেল রেকর্ডস ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকবে, যা আপনাকে ও আপনার ডাক্তারকে সহজেই যেকোনো জায়গা থেকে ইমার্জেন্সি মুহুর্তে এক্সেস করতে সাহায্য করবে।
7. সহজ অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও ফলো-আপ: সার্জারী পরবর্তী ফলো-আপ অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলো সহজে বুক করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাবেন।
8. ২৪/৭ কাস্টমার সাপোর্ট: যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে আমাদের ২৪/৭ কাস্টমার সাপোর্ট টিম আপনার সাথে থাকবে, যাতে আপনার কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়।
9. পরামর্শ ও গাইডেন্স: সার্জারীর আগে ও পরে আমাদের চিকিৎসকরা আপনাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও গাইডেন্স প্রদান করবেন, যাতে আপনি সবকিছু সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে পারেন।
10. বীমা সহযোগিতা: আমরা বিভিন্ন বীমা কোম্পানির সাথে কাজ করি, যাতে আপনার বীমার আওতায় থাকা সুবিধাগুলো আপনি আমাদের মাধ্যমে সহজেই পেতে পারেন।
এই সকল সুবিধা এবং বৈশিষ্ট্যের জন্য হেলথপ্ল্যান বিডি আপনাকে সেরা সার্জারী প্যাকেজ সেবা প্রদান করতে প্রস্তুত।
FAQ
প্রশ্নঃ হারনিয়া এর লক্ষণ কী কী ?
উত্তরঃ কোন কোন সময় হার্নিয়ার কোন লক্ষণ নাও থাকতে পারে। মেডিক্যাল পরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করা যায় না। তারপরেও কিছু লক্ষণ রয়েছে যা জানা থাকা জরুরি
- পেটের যে অংশে হারনিয়া হয় সেখানে ফুলে যাওয়া ও ব্যথা অনুভূত হওয়া
- ফোলা অংশে চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হয়।
- পেটের অস্বস্তি বাম দিকে, পাঁজরের নীচে
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- খাওয়া দাওয়ার অরুচি।
- ছোট বাচ্চাদের হার্নিয়া হলে ব্যথা বা অস্বস্তিতে কান্না করে, বিশেষ করে খাওয়ার পর বা শারীরিক পরিশ্রম করলে।
প্রশ্নঃ হারনিয়া হলে কি অপারেশন প্রয়োজন?
উত্তরঃ হ্যাঁ, হারনিয়া এর স্থায়ী সমাধান অপারেশন। হার্নিয়া হলে অপারেশন প্রয়োজন কিনা তা নির্ভর করে হার্নিয়ার ধরন, আকার, এবং লক্ষণের উপর। যদি হার্নিয়া ছোট হয় এবং তেমন কোন উপসর্গ না থাকে, তবে চিকিৎসক কেবল পর্যবেক্ষণ করতে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে, বড় বা বেদনাদায়ক হার্নিয়া হলে, অথবা যদি হার্নিয়া আটকে যায় বা রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়, তখন অপারেশন প্রয়োজন হয়। হার্নিয়া অপারেশন সাধারণত সফল হয় এবং রোগীকে ভবিষ্যতে জটিলতা এড়াতে সহায়তা করে।