বক্ষ ব্যাধি বলতে মানব দেহের বুক সংক্রান্ত ব্যাধি বা রোগকে বুঝায়। পূর্বে যদিও বক্ষব্যাধি সমস্যা বলতে শুধু যক্ষ্মা বা টিবিকে বুঝানো হতো, কিন্তু বর্তমানে এই বক্ষ ব্যাধির ব্যপ্তি বিশাল।
বক্ষ ব্যাধির কারণ প্রধানত বায়ু দূষণ। বাংলাদেশে বর্তমানে বায়ু দূষণের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে ই চলছে। আর এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন ফুফফুসীয় ব্যাধি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা এতে আক্রান্ত হন বেশি।
আমরা আজ এই নিবন্ধে বক্ষব্যাধির বিভিন্ন নাম, রোগ গুলোর উপসর্গ এবং এর বিশেষজ্ঞ সম্পর্কে জানবো যারা রাজশাহীতে সেবা দিয়ে থাকেন ।
বক্ষ ব্যাধির মধ্যে রয়েছে
- অ্যাজমা
- ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি
- ব্রঙ্কিয়াটেসিস
- যক্ষ্মা
- নিউমোনিয়া সহ আরও অনেক জটিল সমস্যা।
অ্যাজমা রোগের কারণ ও লক্ষণঃ অ্যাজমা বা হাঁপানি হলো ফুসফুসের শ্বাসনালীতে প্রদাহ জনিত সমস্যা। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দীর্ঘ মেয়াদে ভুগে থাকেন, বিশেষ করে শীতকালে এর তীব্রতা বেড়ে যায়।
অ্যাজমার সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা এটিকে বংশগত কারণ বলে উল্লেখ করে থাকেন। আবার পশু পাখির লোম, ধুলোবালি, কুয়াশা, কল কারখানার ধোয়া, ফুলের রেণু ইত্যাদি এলার্জি জাতীয় বস্তু থেকে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে শ্বাস নালী ফুলে যায় ফলে বাতাস চলাচলে বাধাঁ সৃষ্টি হয়, যার কারণে রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অ্যাজমা বা হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তির নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা যায়।
- দীর্ঘ দিন ধরে হাঁচি কাশি
- অল্পতে ঠান্ডা লেগে যাওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বিশেষ করে রাতে ও ভোরে বেশি সমস্যা হয়
- বুকে চাপ, বুক ভার, জ্বর
- কাশি দেওয়ার সময় বুক শক্ত হয়ে যাওয়া
- শো শো শব্দ হওয়া
- অল্প পরিশ্রমে ই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়
- ভিতরে কফ থাকলেও তা কাশির সাথে বের হতে চায় না।
ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি এর কারণ ও লক্ষণঃ অ্যাজমার মতো এটা ও শ্বাসনালীর দীর্ঘ মেয়াদি অসুখ, তবে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন অ্যাজমা শ্বাস প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে কিন্তু এই সিওপিডি দীর্ঘস্থায়ী অবরোধ সৃষ্টি করে।
এটি প্রধানত ব্যক্তির বহুদিনের খারাপ অভ্যাস যেমন ধূমপান করার কারণে হয়ে থাকে। আবার অ্যাজমা আক্রান্ত ব্যক্তি যদি ধূমপায়ী হন তাহলে তাদের ৮০- ৯০ ভাগ ব্যক্তি এই সমস্যায় ভুগেন। সিগারেটের ধোয়া এর তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে ধূমপান করা ব্যক্তির সাথে সহাবস্তানেও এটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি রয়েছে। সিওপিডি সময় মতো নিয়ন্ত্রণ না করলে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি থাকে।
এই ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ ডিজিজ হলো বিভিন্ন ফুসফুসীয় সমস্যার চূড়ান্ত পর্যায়। এর লক্ষণ গুলো নিম্ন রুপ
- কাশি, কাশির সাথে শব্দ হয় এবং কাশির সাথে কফ বের হয়
- শ্বাস কষ্ট এবং
- হাটা চলা, সিড়ি বেয়ে উপড়ে উঠার ফলে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পায়
- ওজন কমে যায়
ব্রঙ্কিয়াটেসিস এর কারন ও লক্ষণঃ ব্রঙ্কিয়াটেসিস ও ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা যা বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের জন্য হয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত হলে মিউকাস না শ্লেষ্মা পরিষ্কার হয় না, বা বের হতে পারে না, ফলে মিউকাস আটকে থেকে শ্বাস নালীর আরো ক্ষতি করে। এতে শ্বাস নালী আক্রান্ত হয় এবং ঝিল্লিতে প্রদাহ হয়।
স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, ধূলিকণা, কলকারখানার ধোয়া, ধুমপান এর কারনে এটি হয়ে থাকে। এর লক্ষণ গুলো নিম্নরুপ
- কফ যুক্ত কাশি
- বুকে ব্যথা ও শ্বাস কষ্ট
- দুর্গন্ধযুক্ত কফ
- সর্দি, জ্বর ও ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যাওয়া
- নখ ও আঙুলের ডগা স্ফীত হওয়া
- অল্পতে ঠান্ডা লেগে যাওয়া ও রাতে ঘেমে যাওয়া
যক্ষ্মার কারণ ও লক্ষণঃ যক্ষ্মা ব্যক্টেরিয়ার সংক্রমণে হয় যার নাম মাইক্রোব্যক্টেরিয়াম টিউবার কিউলোসিস। যক্ষ্মার জীবাণু আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি থেকে ছড়ায়। এটি অন্যান্য প্রত্যঙ্গে হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানব শরীরের ফুসফুসে হয়। তবে যক্ষ্মা নিয়মিত ঔষধ সেবনে ভালো হয়।
জন্মের পরেই শিশুদের বিসিজি নামক টিকা দেওয়া হয় যার কারণে যক্ষ্মা প্রতিরোধ করা সম্ভব।এই টিকা গ্রহণ ও উন্নত চিকিৎসার কারণে বর্তমানে আগের চেয়ে যক্ষ্মার প্রকোপ কমে আসছে। তবুও এখনো বাংলাদেশে এটি একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। কারণ যক্ষ্মার লক্ষণ সম্পর্কে সবাই সঠিক ভাবে এখনো জানে না।
যক্ষ্মা এর লক্ষণ গুলো নিম্ন রুপ
- রোগীর শরীর দিন দিন শীর্ণ হতে থাকে
- প্রচন্ড কাশি, খুস খুসে কাশির সাথে রক্ত আসে
- কাশি দীর্ঘমেয়াদি হয়, সাধারণত ৩ সপ্তাহের বেশি হয়
- কাশির সাথে বুক ও পিঠ ব্যথা
- জ্বর হতে পারে তবে শরীরের তাপমাত্রা বেশি হয় না
নিউমোনিয়ার কারণ ও লক্ষণঃ নিউমোনিয়া ছত্রাক, ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে। শীতকালে অনেক শিশুদের মধ্যে এই নিউমোনিয়ার লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। নিউমনিয়া হলে ফুফফুস তরল পদার্থ বা পুঁজে পূর্ণ হয়ে যায়, ফলে রোগী শ্বাস নিতে পারে না।
এর লক্ষণ গুলো নিম্ন রুপ
- কাশি ও জ্বর
- শ্বাস কষ্ট
- শিশুর খাবারে অনীহা, ক্রমান্বয়ে দুর্বলতা
- নাকের দুপাশ ফুলিয়ে শ্বাস নেওয়া
- বুকে ঘড় ঘড় শব্দ করা
- অক্সিজেনের অভাবে মাথা ঝাকাতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে শরীর নীল হয়ে যায়।
বক্ষব্যাধির চিকিৎসাঃ
বুকের যে যে ফুসফুসীয় সমস্যা গুলো রয়েছে সেগুলো প্রাণঘাতি না হলেও মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারা ব্যাহত করে। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ সবার ই এই রোগ গুলোতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বয়স বেশি হলে এর তীব্রতা বেড়ে যায় বিধায় আক্রান্ত ব্যক্তি ভোগান্তিতে পড়েন।
তবে আশার কথা উপরে উল্লেখিত রোগ গুলোর মধ্যে যক্ষ্মা ব্যতিত অন্যান্য গুলি সম্পুর্ন নিরাময় না হলেও চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগের তীব্রতা কম ও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
আপনার যদি পরিবারের কোন শিশু বা বয়স্ক লোকের মধ্যে উপরের উপসর্গ গুলো থাকে তবে অনতিবিলম্বে একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ এর শরণাপন্ন হন , তিনি রোগীকে রোগের তীব্রতা, বৈশিষ্ট্য ও সমস্যার কারন চিহ্নিত করে ব্যবস্থা পত্র দিবেন।
আমরা এখন রাজশাহীর কয়েকজন বক্ষ ব্যাধি বিশেষজ্ঞ এর নাম ও বিস্তারিত জানবো যেন আমরা তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারি।
১. ডাঃ আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমডি (চেষ্ট মেডিসিন)
এজমা, যক্ষা ও বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
রেসপিরেটরী মেডিসিন
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রাজশাহী।
২. অধ্যাপক ডা: সমীর মজুমদার
এমবিবিএস, এমডি(বক্ষব্যাধী)
বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ( রেসপিরেটরী মেডিসিন) (অবঃ)
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,রাজশাহী।
৩. ডা: মো: মাসুদুর রহমান
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমডি (চেস্ট মেডিসিন) এমসিসিপি (আমেরিকা)
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন)
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
৪. ডাঃ মোহাম্মদ জান্নাতুল রায়হান
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমডি (বক্ষব্যাধি) বিএসএমএমইউ, এমএসিপি (আমেরিকা)।
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
বক্ষব্যাধি হাসপাতাল রাজশাহী
এক্স-জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
বক্ষব্যাধি, মেডিসিন, এ্যাজমা, এলার্জি, যক্ষ্মা, করোনা রোেগ ও স্লিপ এপনিয়া বিশেষজ্ঞ
বিএমডিসি রেজি নং: এ-৬০৩৫৯
ইমেইল: zannatulrayhan@gmail.com
৫. ডাঃ শীষ মোহাম্মাদ সরকার
এমবিবিএস, বিসিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন),
এমডি (বক্ষব্যাধি)
মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ।
৬. ডাঃ চিত্তরঞ্জন পাল
এমবিবিএস, বিসিএস, এমডি (চেস্ট মেডিসিন),
এমএসিপি (ইউএসএ)
বক্ষব্যাধি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
বক্ষব্যাধি, এ্যাজমা, এলার্জি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, রাজশাহী।
৭. ডা: মো: রেজাউল ইসলাম
এমবিবিএস (ডিএমসি), এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (বক্ষব্যাধী)
মেডিসিন, অ্যাজমা, এলার্জি, যক্ষ্মা ও বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক (বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞ)
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল