ইউরোলজি কী
মানব দেহে মূত্রতন্ত্র একটি জটিল অঙ্গ। মুত্রতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা বিদ্যাকে ইউরোলজি বলে। আর এই ইউরোলজি বিশেষজ্ঞদের বলা হয় ইউরোলজিস্ট। ইউরোলজিস্টরা অপারেশন ও মেডিসিনের মাধ্যমে মূত্র তন্ত্রের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
কিডনি থেকে শুরু করে মুত্রনালীর শেষ পর্যন্ত যে অঙ্গ গুলো মূত্র নির্গমণের সাথে জড়িত সেই গুলো নিয়ে মূত্রতন্ত্র। কিডনি থেকে মূত্র ইউরেটার নামক নালী দিয়ে বের হয়ে ব্লাডারে জমা হয়। মূত্র পর্যাপ্ত হয়ে গেলে সেখান থেকে ইউরেত্রার এর মাধ্যমে মূত্র নির্গমন হয়।
এই সম্পুর্ন পদ্ধতিটা জটিল প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়, এবং সেখানে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বা রোগ হয়ে থাকে। যার কারণে মানুষ ইউরোলজি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়। আবার পুরুষদের প্রজনন তন্ত্রের যেমন অন্ডকোষ, পেনিস, প্রোস্টেট গ্রন্থি ইত্যাদি অঙ্গের সমস্যা এন্ড্রোলজিতে আলোচিত হয় যা ইউরোলজির আরেকটি শাখা।
আজ এই নিবন্ধে ইউরোলজি ও এন্ড্রোলজির বিভিন্ন রোগের নাম, কারন, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানবো ।
ইউরিন ইনফেকশান বা প্রস্রাবে সংক্রমণ :
ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন বা UTI বা প্রস্রাবের ইনফেকশান হলো যুবক যুবতী থেকে শুরু করে শিশু ও বয়স্কদের একটি সাধারণ সমস্যা। এটা সাধারণত আমাদের খাদ্য নালীতে থাকা ইকোলাই ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।
এই সংক্রমণ পুরুষদের চেয়ে নারীদের বেশি হয় । একজন ইউরোলজিস্ট বলেন যে, তাদের কাছে আসা প্রতি ১০ জন এই সমস্যার রোগীর ৯ জন ই মহিলা এবং ১ জন পুরুষ হয়ে থাকেন। এর কারণ মেয়েদের মূত্র নালী দৈর্ঘ্যে ছোট থাকে এবং পায়ু পথের খুব কাছে বলে সহজেই মল ত্যাগের পর জীবাণু মূত্রনালীর মাধ্যমে সংক্রামিত হয় ফলে ইনফেকশন হয়ে থাকে।
এই সংক্রমণের কারন হতে পারে কম পানি পান করা, যার ফলে ব্যাক্টেরিয়া মূত্র থলীতে প্রবেশ করলে আর বের হয় না। আবার অনেক মেয়েদের বিবাহের পর পর যৌন মিলনের কারনে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণে হয়।
ঋতুস্রাবের সময় অস্বাস্থ্যকর ন্যাপকিন ব্যবহারের কারণে ও হয়ে থাকে। আবার মেনোপেজের সময় মেয়েদের হরমোন কমে যায়, ফলে একটু বয়স্ক মহিলাদের প্রস্রাবের জ্বালা পোড়া হয়। অনেক মহিলার আটো সাটো আন্ডার গার্মেন্টস পরিধান করার কারণে ও জীবাণুর দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার মেয়েদের গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে সমস্যা হয়। তাছাড়া ডায়বেটিস ও কেমো থেরাপির জন্য ও প্রস্রাবে ইনফেকশান হতে পারে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের নালী চিকন থাকে, বা প্রোস্টেট বড় হয়ে প্রস্রাবে বাধা দেয়, আবার কিডনি বা মূত্র থলিতে পাথর বা ইউরিটারে পাথর আটকে যাওয়ার কারণে প্রস্রাবে সংক্রমণ হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে মলত্যাগ সম্পন্ন করার পর ভালো করে ধৌত করা না হলে মলদ্বারের জীবাণু মূত্রনালীতে ঢুকে যায়। আবার দীর্ঘ সময় ডায়াপার বদলে না দিলেও জীবাণু সংক্রমণের কারণে প্রস্রাবের ইনফেকশান হয়ে থাকে।
প্রস্রাবের সংক্রমণে নিম্নলিখিত উপসর্গ গুলো দেখা যেতে পারে
- প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া ও প্রস্রাব ঠিক মতো না হওয়া
- বার বার প্রস্রাবের বেগ হওয়া
- তলপেটে ব্যথা
- কোন কোন সময় কিডনি পর্যন্ত ব্যাক্টেরিয়া পৌছে যায় এবং পিঠের দুইপাশে ব্যথা ও রোগীর কাপুনি দিয়ে জ্বর হয়।
- প্রস্রাবের রঙ ঘোলাটে ও দূর্গন্ধ। কোন কোন সময় প্রস্রাবের সাথে রক্ত বা পূজ বের হওয়া
- প্রস্রাবের বেগ ধরে রাখতে কষ্ট হওয়া
- বয়স্কদের এলো মেলো কথা বলা, মেজাজ খিটখিটে ও চিন্তা শক্তি কমে যাওয়া
- শিশুদের ক্ষেত্রে খাওয়ার অরুচি, ওজন কমে যাওয়া। অনেক সময় ডায়রিয়া ও জ্বর হওয়া।
কিডনি ও মূত্র থলিতে পাথরঃ
মানুষের ভেজাল খাদ্য গ্রহণ ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের পরিনতিতে কিডনি ও মূত্র থলিতে পাথরের সৃষ্টি হয়। এই পাথর হওয়া বর্তমানে একটি মহামারির মতো।
কিডনি ও মূত্র থলিতে অনেক কারনে পাথর হতে পারে।
কিডনির পাথর কোন সময় মূত্রনালীতে নেমে আসতে পারে।
সেটা যদি আটকে থাকে তখন তলপেটে এবং যৌনাঙ্গে প্রচন্ড ব্যথা হয়।
কিডনি ও মূত্র থলিতে পাথরের লক্ষণ, পাথরের আকার ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে।
- তীব্র ব্যথা হয়
- এই ব্যথার তীব্রতা কখনো কমে কখনো বেড়ে যায়।
- রোগীর বমি হতে পারে, জ্বর হতে পারে এবং সাথে ক্ষুধা মন্দা।
- কখনো প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হয়।
- মূত্র থলিতে বা মূত্র নালীতে পাথরের কারণে প্রস্রাব বের হতে বাধা পায়, যার কারণে প্রচন্ড যন্ত্রণা হয়।
প্রোস্টেট গ্রন্থি সমস্যাঃ
পুরুষের প্রোস্টেট গ্রন্থি হলো মূত্র থলির নিচে, যার মধ্য দিয়ে মূত্রনালী অতিক্রম করেছে। প্রোস্টেট গ্রন্থির কাজ শুক্রাণুর খাদ্যের যোগান দেওয়া। বয়স্ক পুরুষদের বিশেষ করে ৫০ বছরের অধিক হলে এই গ্রন্থি বড় হয়ে যায়। ফলে প্রস্রাবের অনেক বেগ থাকা সত্ত্বেও প্রস্রাব আটকে থাকে, সামান্য বের হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। মূত্র নালী সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে এটা হয়। ইউরোলজিস্টরা এ ক্ষেত্রে প্রোস্টেট গ্রন্থি বের করে দেন।
আবার বর্তমানে আরেক টি নীরব ঘাতক হলো প্রোস্টেট ক্যান্সার। এটা হলো প্রোস্টেট টিস্যুর ক্যান্সার। বর্তমানে এটি পুরুষদের প্রাণ হানির দ্বিতীয় কারণ।
প্রোস্টেট ক্যান্সারের উপসর্গ গুলো সব সময় বুঝা যায় না, তবে নিচে কিছু উপসর্গ দেওয়া হলো যা প্রোস্টেট এর ক্যান্সার নির্দেশ করে
- বার বার প্রস্রাবের বেগ
- কষ্টকর স্পার্ম নিঃসরণ
- প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
- ওজন হ্রাস
- প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া
- পিঠে ও নিতম্বে ব্যথা ও ফোলাভাব
- প্রস্রাবের প্রবাহ কম
শিশুদের জন্মগত ত্রুটিঃ
শিশুদের জন্মগতভাবে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। সাধারণত কিডনি হতে মূত্র নির্গমন হয় কিন্তু জন্মগত ত্রুটির কারণে মূত্র আবার কিডনিতে ফিরে যায়। সেক্ষত্রে ভাল্ব জিনিস টা ডেমেজ থাকে, ফলে এটি হয়। আবার কোন কোন সময় ছোট বাচ্চার প্রস্রাব বের হতে চায় না বা ফোটা ফোটা পড়ে যাকে ফাইমোসিস বলা হয়। তাই ছোট বাচ্চার জন্মের পর ই যদি প্রস্রাব কম হয় , প্রস্রাব দূরে ছিটকে না যায় বিশেষ করে ছেলে বাচ্চার, বা প্রস্রাবে সংক্রমণ থাকে তবে খুব দ্রুত একজন ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ দেখানো উচিত।
ইউরোলজিক্যাল ইমার্জেন্সিঃ
কিছু সমস্যা রয়েছে বিশেষ করে পুরুষদের; খুব তাড়াতাড়ি বিশেষজ্ঞের নিকটে না গেলে বা চিকিৎসা না নিলে খুব খারাপ অবস্থা সৃষ্টি হয়। যেমন
- হঠাৎ অন্ড কোষ ফুলে গেলে
- টেস্টিকুলার টর্শন, যার চিকিৎসা ৬ ঘন্টার মধ্যে না নিলে অন্ড কোষ পঁচে যেতে পারে
- একিউট ইউরেনারি রিটেশন বা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া
এ ক্ষেত্রে খুব দ্রুত চিকিৎসা নিতে হয়। ইউরোলজি বিশেষজ্ঞরা নল দিয়ে প্রস্রাব বের করে দেন, এবং পরে তার যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
আরো অনেক সমস্যা রয়েছে যার জন্য আপনাকে ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে। যেমন
- পুরুষের বন্ধ্যাত্ব ও হার্নিয়া
- কিডনিতে সিস্ট, টিউমার ও টিবি
- ব্লাডারে টিউমার ও টিবি
- ইউরেটারে টিউমার, চিকন হয়ে যাওয়া
- ইউরেটাইল ডিস ফাংশন বা লিঙ্গ উত্থান জনিত সমস্যা
- দ্রুত বীর্যপাত বা প্রি মেচুউর ইজাকুলেশন
ইউরোলজিক্যাল সমস্যায় দেরি করা উচিত না। আর সব চেয়ে গুরুত্বপুর্ণ সঠিক রোগ নির্ণয়। অনেকের রোগ সঠিক ভাবে নির্ণয় করা হয় না বলে তাদের অনেক চিকিৎসার পরেও এটি বারবার ফিরে আসে। ইউরোলজি সংক্রান্ত সব রোগ হয়তো প্রাণ নাশক নয়, কিন্তু এই রোগ গুলো মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন নষ্ট করে দেয়। একজন মানুষকে পঙ্গু করে দেয়। অস্বস্তিকর রোগের কারণে নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ সবার জীবনের সুখ শান্তি ব্যাহত হয়। আর সময় মত চিকিৎসা না করালে অনেক জটিল অবস্থা তৈরি হয়।
রাজশাহীতে অনেক ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যাদের নাম নিচে দেওয়া হলো
এমবিবিএস, বিসিএস
এফসিপিএস (সার্জারী)
এমএস (ইউরোলজী)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
ইউরোলজি সার্জন
ইউরোলজি সার্জারী বিভাগ
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী
এমবিবিএস, এফসিপিএস(সার্জারী), এমএস (ইউরোলজী)
সহকারী অধ্যাপক
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
এমবিবিএস, এমএস(ইউরোলজী)
সহকারী অধ্যাপক এবং
বিভাগীয় প্রধান ইউরোলজী বিভাগ
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ইউরোলজী বিশেষজ্ঞ
(কিডনী, মুত্রনালী, মুত্রথলী ও পুরুষ প্রজননতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ও সার্জন)।
৪. প্রফেসর ডা: মো: আবুল কাসেম সরকার
এমবিবিএস, এমএস, পিএইচডি (ইউরোলজী)
অধ্যাপক, ইউরোলজী (অবঃ)
ইউরোলজিস্ট, এন্ডোস্কপিক ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন
এমবিবিএস,এমএস (ইউরোলজি), এফসিপিএস(সার্জারী), এমআরসিএস (এডিন,ইউকে)
ট্রেইন্ড ইন এডভান্স ল্যাপারোস্কপিক সার্জারী এন্ড ইউরোলজি (ইন্ডিয়া)
ইউরোলজি ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জারী বিশেষজ্ঞ,
সহকারী অধ্যাপক ইউরোলজি বিভাগ,
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,রাজশাহী।
এমবিবিএস, এমএস(ইউরোলজী)
সহকারী রেজিষ্ট্রার (ইউরোলজী)
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী।
এমবিবিএস, এফসিপিএস(ইউরোলজী, শেষ পর্ব), এমএস(সার্জারী, কোর্স)
কিডনী, মুত্রনালী, মুত্রথলি, প্রষ্টেট ও প্রজননতন্ত্র এবং সার্জারী চিকিৎসক
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
এমবিবিএস, বিসিএস, এমএস (ইউরোলজি)
ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
এমবিবিএস, এফসিপিএস(সার্জারী), এমএস (ইউরোলজী)
ল্যাপারোস্কপিক ও ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
এমবিবিএস, এমএস (ইউরোলজি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ
সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান
ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ, ঢাকা